এমএম আকাশ
আরেকটি বাজেট পেশের সময় চলে এলো। এবারের বাজেটের বিশেষ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এটা হচ্ছে ঘনীভূত সম্পদ ঘাটতি এবং সম্পদপ্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তা। ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে, নতুন বছরের বাজেট হবে আনুমানিক ১ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার, যা চলতি ২০১১-১২ অর্থবছরের চেয়ে ১৬ শতাংশের মতো বেশি। তবে এখানে ফাঁকি রয়েছে। বিদায়ী বছরের বাজেটে সরকার ভর্তুকির যে হিসাব করেছিল, তা অপ্রত্যাশিতভাবে বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে ৪০ হাজার কোটি টাকায় পেঁৗছেছে। যদিও অর্থমন্ত্রী সম্প্রতি স্বীকার করেন, এ অপ্রত্যাশিত ব্যয় বৃদ্ধি হতো না, যদি তারা কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত না নিতেন। বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম যে হঠাৎ বেড়ে যেতে পারে এবং বেড়ে গেলে যে সব হিসাব ওলটপালট হয়ে যেতে পারে_ এ কথা কিন্তু অর্থমন্ত্রীর চলতি বছরের বাজেট ভাষণের এক স্থানে উল্লেখ করা হয়েছিল। তবে ওলটপালট হয়ে গেলে কী করা হবে, সে বিষয়ে বাজেটে কোনো পরিকল্পনা উপস্থিত করা হয়নি। অর্থমন্ত্রী এক আলোচনায় স্বীকার করেছেন, কুইক রেন্টালের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সিদ্ধান্ত আরও ভেবেচিন্তে নিলে ভালো হতো। যাই হোক, ৪০ হাজার কোটি টাকার ভর্তুকির পুরোটা বিদায়ী অর্থবছরের বাজেটে সংস্থান করা সম্ভব হয়নি। ব্যাংক থেকে প্রচুর ঋণ নিয়েও পুরোপুরি মেটানো যায়নি। বিদ্যুতের দাম দফায় দফায় বাড়িয়েও ভর্তুকির আকার খুব একটা কমানো যায়নি। শেষ পর্যন্ত সরকার বাধ্য হয়ে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকির চাপ আগামী অর্থবছরের কাঁধে তুলে দিতে চাইছে। সুতরাং ওই বোঝাটি বাদ দিয়ে এ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটের আকার বাস্তবে হবে ১ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। টাকার হিসাবে আগের বছরের তুলনায় বাড়বে মোটামুটি মাত্র ১২ শতাংশ!
কিন্তু আমরা জানি যে, চলতি অর্থবছরে মূল্যস্ফীতির হার ছিল দুই অঙ্কের ঘরে (১০ শতাংশ বা তার বেশি)। তাহলে প্রকৃত মূল্যে বাজেটের আয়তন বাড়বে খুবই নগণ্য অর্থাৎ মাত্র ২ শতাংশ। সুতরাং অর্থমন্ত্রীকে ভাবতে হবে যে, এই স্বল্প বৃদ্ধির বাজেট দিয়ে তিনি শ্যাম, না কুল_ কোনটা রাখবেন।
আগামী বছরে যদি জ্বালানি তেলের দাম সহসা বৃদ্ধি পায় এবং সরকার যদি দ্রুত কুইক রেন্টাল থেকে সরে এসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে যেতে না পারে, তাহলে হয় তাকে আরও বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দিতে হবে, না হয় বিদ্যুতের দাম গ্রাহক পর্যায়ে বিপুলভাবে বাড়াতে হবে। প্রশ্ন হচ্ছে, বিপুল পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া সরকারের পক্ষে আর কি সম্ভব? বাজেটে কি তার জন্য বাড়তি অর্থ রাখা হয়েছে কিংবা হবে? নতুন বছরের বাজেট আকার থেকে মনে হয়, সরকার ঠিক করে রেখেছে যে, আর ভর্তুকি নয়। এমনকি এ আকারের বাজেট প্রণয়নের জন্যই সরকারকে এখন আইএমএফ ও অন্য দাতাদের কাছে ধর্ণা দিতে হয়েছে। আর আমরা জানি যে, আইএমএফ যখন টাকা দেয়, তখন তারা প্রবৃদ্ধির ব্যাপারে চিন্তিত থাকে না। চিন্তিত থাকে বাজেট ঘাটতি কমিয়ে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে। এ বছরেও তা-ই হয়েছে। তাদের শর্ত সম্পর্কে যতটা জেনেছি, দেখা যায় ভর্তুকি কমাতে বলা হয়েছে এবং বিশেষ করে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিদ্যুতের দাম বাড়াতে হবে। সরকার এ তিক্ত বটিকা গলাধঃকরণ করতে বাধ্য হয়েছে। কোমরের বেল্ট যতই কষে বেঁধে ব্যয় কমানোর চেষ্টা হোক না কেন, মূল্যস্ফীতি কি তাতে কমবে? বিশ্বে যেখানে যেখানে আইএমএফের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী কাজ হয়েছে সেখানেই দেখেছি_ জোসেফ স্টিগলিৎসের ভাষায় 'ওগঋ জওঙঞ'. এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ ইন্দোনেশিয়া। কৃষিসহ অন্য সব সামাজিক খাত থেকে যদি আমরা ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে বাধ্য হই, বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি ইত্যাদি পাবলিক ইউটিলিটির দাম যদি বেড়ে যায়, পরিবহন ব্যয় যদি বৃদ্ধি পায়, তাহলে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে উৎপাদিত দ্রব্যের মূল্য বেড়ে যাবে। আমরা যদি আইএমএফের কথা অনুযায়ী ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়াই, তাতেও উৎপাদন খরচ বাড়বে। যদি টাকার অবমূল্যায়ন হয় তাহলেও আমদানি দ্রব্যের দাম বেড়ে যাবে। এতগুলো দাম বৃদ্ধির সম্মিলিত চাপে মূল্যস্ফীতিকে কি আমরা প্রতিরোধ করতে পারব? সুতরাং মূল্যস্ফীতি প্রতিরোধ করতে কেবল ব্যয় সংকোচনের পথে আমরা অগ্রসর হতে পারি না। আমাদের উৎপাদনের দক্ষতা বাড়িয়ে, সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে, জিডিপি বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। সরকার যদি মনে করে থাকে, আইএমএফের একরোখা নীতি অনুসরণ করে মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে আনা সম্ভব হবে, তাহলে বোকার স্বর্গে বাস করা হচ্ছে বলে ধরে নিতে হবে। এটা করতে গিয়ে যা হবে, তা হচ্ছে মুদ্রাস্ফীতিও কমবে না, প্রবৃদ্ধিও হ্রাস পাবে।
এ বছর প্রবৃদ্ধির হার কী হবে, সেটা কে জানে? 'বন্ধু আইএমএফ' বলে দিয়েছে, এটা হবে ৫ দশমিক ৫%। 'আরেক বন্ধু' এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক বলেছে ৬ দশমিক ২%। 'অপর বন্ধু' বিশ্বব্যাংক বলছে ৬ শতাংশ। এ হার যা-ই হোক না কেন, কোনোটাতেই সরকার সন্তুষ্ট হবে না। কারণ, তাদের লক্ষ্য ৭% এবং নতুন বছরের জন্য ধরা আছে ৭ দশমিক ৩%। কিন্তু ব্যাংক থেকে ভর্তুকি মেটাতে সরকার যে পরিমাণ ঋণ নিয়েছে, তাতে যে ক্রাউডিং আউট অ্যাফেক্ট হয়েছে, তার ফলে আশানুরূপ বেসরকারি বিনিয়োগ হয়নি বলেই উদ্যোক্তারা বলছেন। বিদ্যুৎ এবং অবকাঠামো ক্ষেত্রে যে সংকট ছিল, তার ফলেও নতুন শিল্পে বিনিয়োগ যথাযথ মাত্রায় হয়নি। কৃষি উৎপাদন, তৈরি পোশাক শিল্প রফতানি এবং রেমিট্যান্স প্রবাহ যদি আরেকটু কম হারে বৃদ্ধি পেত, তাহলে এ বছর প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের নিচে থাকত_ তাতে সন্দেহ নেই। এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে সরকারের উচিত হবে প্রবৃদ্ধির হার অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে এসব খাত থেকে আয় বাড়ানোর জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নিয়োগ করা। আইএমএফের কথা শুনে যদি এসব খাতে সরকারি ব্যয় কমানো হয়, তাহলে প্রবৃদ্ধির হার কিছুতেই ধরে রাখা সম্ভব হবে না। সুতরাং হরেদরে সুদের হার বাড়ানো বা ভর্তুকি কমানো মোটেই কাম্য হবে না। কৃষি খাত সরকারকে একটা সুবিধা দিয়েছে_ বাজারে খাদ্যশস্যের দাম কম। এটা কমিয়ে রাখা সরকারের রাজনৈতিক জনপ্রিয়তার জন্য জরুরি। সমাজের হতদরিদ্র ক্ষুধার্ত ২৫ শতাংশকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যও এটা জরুরি। তবে ৩৫ টাকা দরেও দরিদ্ররা চাল কিনতে পারে না। সুতরাং তাদের জন্য বাজারবহির্ভূর্ত নিরাপত্তা ব্যয়ের যেসব কর্মসূচি রয়েছে, সেগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। পোশাক শিল্প খাতের জন্য প্রস্তাবিত রেশন ব্যবস্থা কার্যকর করতে হবে। কারণ ইতিমধ্যে মুদ্রাস্ফীতির কারণে প্রকৃত আয় ২ বছর আগের তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ কমেছে। সে জন্য ধূমায়িত অসন্তোষের লক্ষণও স্পষ্ট। দরকার হলে সরকারের ভাণ্ডারে অর্থ না থাকলে পোশাক শিল্পের মালিকদের মুনাফার যে ৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণে ব্যয় করার কথা_ যা থেকে বছরে আনুমানিক ১৫০ থেকে ৩২০ কোটি টাকা মিলতে পারে, সেটা সংগ্রহ করে শ্রমিকদের জন্য বাসস্থান ও রেশন ব্যবস্থা চালু করা যায়। মনে রাখা দরকার, একবার যদি এ শিল্পে ধস নামে, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, তাহলে বৈদেশিক বাণিজ্য লেনদেনে সামগ্রিক ভারসাম্য আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।
ভবিষ্যতে উৎপাদন বাড়াতে আমরা যদি কৃষি উপকরণে ভর্তুকি না দিই; উচ্চমূল্যে ডিজেল, বীজ, সার কিনতে কৃষককে বাধ্য করি, তাহলে উৎপাদন ব্যয় বাড়বে এবং ধানের সংগ্রহমূল্য সরকার ঘোষিত প্রতি কেজি ১৮ টাকায় রাখলেও কৃষকের জন্য সেটা প্রণোদনামূলক হবে না। পরবর্তী বছরের উৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সামগ্রিক প্রবৃদ্ধির হারও তাতে কমবে। সুতরাং একদিকে সরকারের সামনে রয়েছে আইএমএফের পরামর্শ গ্রহণ করার ফলে প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়া, অন্যদিকে বর্ধিত উৎপাদন ব্যয়জনিত মুদ্রাস্ফীতিও অক্ষুণ্ন থাকা। এভাবে দু'দিক থেকে আক্রান্ত হয়ে সরকারের কিছুই করার থাকবে না। আর ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করলে মুদ্রাস্টম্ফীতি সামান্য কমিয়ে প্রবৃদ্ধির ওপর বেশি জোর দিতে হবে।
কিন্তু সরকার যদি একটা দিক অক্ষুণ্ন রাখতে চায়, তাহলে কোনদিকে মনোযোগ দেওয়া উচিত? আমার মতে, তাদের উচিত হবে প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর প্রতিই বেশি মনোযোগ প্রদান। একই সঙ্গে চেষ্টা করতে হবে যথাসম্ভব সেই প্রবৃদ্ধি যেন হয় সমতাপূর্ণ। কেউ বলতে পারেন যে, আইএমএফের তিক্ত বটিকা গলাধঃকরণ না করলে বিদেশি সহায়তা কমে যাবে। এমনিতেই সরকারের হাতে সম্পদের অপ্রতুলতা। এ অবস্থায় বিদ্যুৎ ও অবকাঠামো খাতে কীভাবে প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ সম্ভব হবে? কীভাবে সম্ভব হবে কৃষিতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা? কীভাবে সম্ভব হবে শ্রমজীবী ও হতদরিদ্রদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা জাল আরও প্রসারিত করা? আগের মতো সরকার যদি নতুন বছরেও ব্যাংক ঋণের আশ্রয় নেয় তাহলে তো ব্যক্তি খাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে প্রবৃদ্ধির হার কমবে এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পাবে? অধিক মুদ্রাস্ফীতি অথবা কম প্রবৃদ্ধি_ যে জটিল ও দ্বিমুখী সমস্যার শাঁখের করাত সরকারের পা কাটছে, সেখানে দুই বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার একমাত্র পথটি তাই অত সহজ নয়।
কঠিন পথ তথা দক্ষতা বাড়ানো ও সঞ্চয় বাড়ানোর কিছু দিক তুলে ধরে লেখার ইতি টানব।
সরকারি সঞ্চয় বৃদ্ধি পেতে পারে সরকারের যাবতীয় অপচয়মূলক ব্যয় কমিয়ে এবং করের ভিত্তি প্রসারিত করে বা করের হার বাড়িয়ে। এ ক্ষেত্রে সরকারের সামনে বড় একটি সুযোগ সম্পদ করের সঠিক বাস্তবায়নের মধ্যে নিহিত। সরকারের কাছে নিশ্চয়ই কোটিপতি সম্পদশালীদের তালিকা রয়েছে। সম্ভবত এ জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগ তাদের আশপাশেই বিচরণ করে। এ রকম প্রতিশ্রুতি আওয়ামী লীগ তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দিয়েছিল যে, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য সবাই সম্পদের হিসাব নিয়মিত প্রকাশ করবেন। সেটা দিয়েই সরকার শুরু করতে পারে। অর্থমন্ত্রী অনলাইনে কর দিয়েছেন। এটা ভালো খবর। কিন্তু প্রতিশ্রুতির বাকি অংশ বাকি ব্যক্তিরা কেন পূরণ করছেন না? আমরা জানি, প্রথমে দৃষ্টান্ত দিয়ে উৎসাহিত করা না গেলে যার সঙ্গে যেমন, তেমন আচরণ করতে হয়। দুঃখজনকভাবে আমরা দেখছি, সরকার উল্টো পথ ধরছে। যারা অতীতে কর ফাঁকি দিয়েছে, তাদের তোষণ করার জন্য কালো টাকা সাদা করার অনুমতি দিয়েছে। এভাবে যারা আয়কর দেবে না, তারাও জেনে গেছে যে, কর না দিলে বিপদ নেই। আগামী অর্থবছরে কালো টাকা সাদা করা যাবে। এভাবে তো কর খাতে শৃঙ্খলা আনা যাবে না।
ব্যক্তি খাতে যে পুঁজি বিদ্যমান, তা নানাভাবে বিদেশ চলে যাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বিশেষ করে রেমিট্যান্স বাবদ যে অর্থ আসে, সেটা বৈদেশিক মুদ্রায় আসে। এ অর্থ যারা বিদেশে রেখে দিতে চান, তারা বাংলাদেশে প্রাপককে টাকা দিয়ে ডলার-পাউন্ড-ইউরো বাইরে রেখে দেন। এখানেও লেনদেনে দুর্নীতি ও অস্বচ্ছতা রয়েছে। শেয়ার মার্কেটে কেলেঙ্কারির কথা আমরা জানি। হঠাৎ ব্যক্তি খাতে ৯টি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হলো। সেখানেও কোটিপতিরা টাকা খাটালেন। তারা কি কর দিয়ে টাকা সাদা করে বিনিয়োগ করেছেন? জানতে ইচ্ছা হয়_ এই টাকার উৎস কী এবং আদৌ তা সাদা কি?
সুতরাং অপচয় কমানো, দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ, যারা করদানে সক্ষম তাদের কাছ থেকে কর আদায় সর্বোপরি দুষ্টের দমন শিষ্টের পালনের নীতি অনুসরণ না করলে বর্তমান কঠিন অবস্থা থেকে উদ্ধার মিলবে না। যত দ্রুত সম্ভব কুইক রেন্টাল থেকে বের হয়ে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে যেতে হবে। এসবের জন্য আমাদের বেশি বৈদেশিক সাহায্যের দরকার নেই। যে সাহায্য পাইপলাইনে রয়ে গেছে, তা দক্ষতার সঙ্গে ব্যবহার করাই যথেষ্ট হবে। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার বাড়ানোর চেয়ে দক্ষ বাস্তবায়নের প্রতি নজর দিতে হবে। সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা প্রদানের চেয়ে তাদের তৃণমূলে বিকেন্দ্রীকৃত বাজেট তৈরিতে আত্মনিয়োগ করতে বলুন। মানুষের কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করতে হবে, আগামী বছর উন্নয়ন বাজেটে তার এলাকার কোন জিনিসটি সে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চায়_ সেতু, স্কুল, মাঝারি শিল্প, না চালকল কিংবা হাসপাতাল? অথবা বিধবা ভাতা ও অন্যান্য সামাজিক নিরাপত্তা জাল প্রসারিত করা? এলাকার জনগণের ইচ্ছা অনুযায়ী একটি বটম-আপ পরিকল্পনা প্রণয়ন করা চাই। আমাদের অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেওয়ার অনেক আগে তার লেখা বইয়ে যে ধরনের বটম-আপ পরিকল্পনা প্রণয়নের বিস্তৃত বর্ণনা দিয়েছেন_ এ পর্যন্ত তিনটি বাজেট প্রণয়নে তা রক্ষায় তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। কিন্তু আর তো সময় নেই। দেড় বছর পর সাধারণ নির্বাচন। বিরোধী দল এক একটি প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে যে ফারাক রয়েছে তা দেখাতে শুরু করবে। অবশ্য আমাদের বর্তমান প্রধান বিরোধী দল এতই অদক্ষ যে, এ সুযোগ তারা নিতে পারছে না। কিন্তু তারা একটা হট্টগোল বাধিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। আমেরিকা ও ভারতের সমর্থন পেলেও সেই হট্টগোল থামিয়ে দেওয়া সরকারের পক্ষে সম্ভব না-ও হতে পারে। সে রকম রাজনৈতিক গোলযোগ শুরু হলে এমনিতেই যে কঠিন অবস্থা, আগামী বছর তা তরল হয়ে ছত্রাকার হয়ে ছড়িয়ে যেতে পারে।
এমএম আকাশ : অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়